Business Care News

News That Matters

BusinessCare.news, Editorial Banner

বিশ্বের ১৪ শতাংশ আউটসোর্সিং মার্কেট বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সারদের দখলে

হাজারের বেশি বিষয়ে অপার সম্ভাবনার হাতছানি

বিশ্বের ১৫৭ কোটি মানুষ ফ্রিল্যান্সিং করেন। তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছর বা তার নিচে।দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সদের নীরব বিপ্লব হয়েছে। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকার তরুণ-তরুণীরা ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে কয়েক হাজার ডলার উপার্জন করছেন। বর্তমানে বিশ্বের মোট ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে ১৪ শতাংশই বাংলাদেশে। তাঁরা দেশে বসে অনলাইনে বিভিন্ন কাজ করেন।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনের ‘বিশ্ববাণিজ্যের নতুন আকার’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক নানা সংকটের মধ্যেও ব্যবসা-বাণিজ্যকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার চেষ্টা চলছে। তার জন্য ডিজিটাল মাধ্যমই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যায়েই বাংলাদেশের ডিজিটাল সেবা খাতের উত্থানের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি

ফ্রিল্যান্সিংয়ের বাংলা ‘মুক্ত পেশাজীবী’। এ পেশায় নয়টা-পাঁচটা চাকরির বাধ্যবাধকতা নেই। অফিস, বাসা বা যেকোনো স্থানে বসেই কাজ করতে পারেন ফিল্যান্সাররা। এ জন্য লাগবে নিজের দক্ষতা, বিদ্যুৎ আর গতিশীল ইন্টারনেট-সংযোগ।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান স্থানীয় কর্মীর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর কিছু কাজ করালে তাতে খরচ বেশি হয়। আবার অনেক সময় চাহিদামতো কর্মীও পাওয়া যায় না। তারা তখন বাইরে থেকে (আউটসোর্সিং) নির্দিষ্ট কাজটি করিয়ে নেন। এতে ওই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি যেকোনো স্থান থেকে কাজটি করে ওই ব্যক্তিও আয় করেন।

বেশির ভাগ কাজ মেলে নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে। তথ্যপ্রযুক্তির ভাষায় এগুলো ‘অনলাইন মার্কেটপ্লেস’ (অনলাইন কাজের বাজার)। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে।

দেশে কত ফ্রিল্যান্সার আছেন, তার সঠিক কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। তবে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান তানজিবা রহমান জানালেন, বাংলাদেশ থেকে ১৫৩টি মার্কেটপ্লেসে কাজ করা হয়। সেগুলো হিসাব করলে ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ।

উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে সহায়তা প্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এক্সপ্লোডিং টপিকসের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের ১৫৭ কোটি মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত। আর তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছর বা তার কম।

এক্সপ্লোডিং টপিকসের তথ্য জানাচ্ছে, ওয়েব ডিজাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। প্রতি ঘণ্টায় তারা গড়ে ২১ মার্কিন ডলার আয় করেন। যদিও পেওনার ফ্রিল্যান্স ইনকাম সার্ভে রিপোর্ট ২০২৩ অনুযায়ী, এখন প্রতি ঘণ্টায় ফ্রিল্যান্সাররা গড়ে ২৮ ডলার আয় করছেন।

ডিজিটাল সেবা রপ্তানি

ডব্লিউটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল সেবা খাতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখনো পরিমাণে কম হলেও ডিজিটাল সেবা রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেশ। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানিতে গড়ে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তার বিপরীতে ডিজিটাল সেবা রপ্তানিতে গড় প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ। ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতিবছর গড়ে ১৮ শতাংশের মতো বড় হচ্ছে। ২০২১ সালেই ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ দ্রুতগতির ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিলেন। প্রত্যন্ত এলাকায় ৮ হাজার ২৮০টি ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে।

বাংলাদেশে অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) বরাত দিয়ে ডব্লিউটিওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৪০০ প্রতিষ্ঠান ৮০টি দেশে ১৩০ কোটি ডলারের ডিজিটাল সেবা রপ্তানি করেছে। পরের অর্থবছর ১৬৭টি গন্তব্যে রপ্তানি হয় ১৪০ কোটি ডলারের ডিজিটাল সেবা। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে আইসিটি খাতের অবদান ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ খাতে সরাসরি ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২৫ সালে সেটি বেড়ে ৫ লাখ হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, কনসালট্যান্সি সার্ভিস, নন-কাস্টমাইজ কম্পিউটার সফটওয়্যার, ডেটা প্রসেসিং ও হোস্টিং সার্ভিস, কম্পিউটার মেরামতসহ বিভিন্ন সেবা রপ্তানিতে চার বছরের ব্যবধানে দেড় গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের কম্পিউটার-সংক্রান্ত সেবা রপ্তানি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে সেটি বেড়ে ৩০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার হয়। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর কম্পিউটার-সংক্রান্ত সেবা রপ্তানি বেড়ে ৫৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

আউটসোর্সিংয়ে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য আর সময় নষ্ট না করে যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে নেমে পড়ুন কাজে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে।

Skip to content