Business Care News

Business News That Matters

BusinessCare.news, Editorial Banner

ব্যবসায় ধীরগতি ডলার সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নিন

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমশ কমছে। এর ফলে সৃষ্ট সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমদানিকারকদের। ব্যবসায়ীরা সময়মতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না। যে কারণে ব্যাংকের কাছে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর ধরনা দিতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সমাধান হচ্ছে না। উল্টো ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের ডলার জোগাড় করে দিতে বলছে। এতে এলসি খুলতে বিলম্ব হওয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাঁচামালের দাম কম থাকাকালে ব্যবসায়ীরা কিনতে পারছেন না। এমনকি ডলারের দামেও হেরফের হচ্ছে। সব মিলিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, এর আশু সমাধান না হলে অদূরভবিষ্যতে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি সহযোগী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, কিছুদিন আগেও ঋণপত্র (এলসি) খোলার অনুরোধ নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তারা বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানে ছুটেছেন। এমনকি ব্যাংকের এমডিসহ শীর্ষ নির্বাহীদেরও এ নিয়ে উদ্যোক্তাদের কাছে বিশেষ অনুরোধ থাকত। ডলার সংকট এ চিত্র পুরোপুরি উল্টে দিয়েছে। এখন আমদানি চালু রাখতে প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান ও এলসি খোলার অনুরোধ নিয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের কাছে উদ্যোক্তাদের ছুটে আসতে হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকে সফলভাবে এলসি খোলা নিশ্চিত করা আমদানিকারক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি-পরিচালকদের অন্যতম প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডলার সংকটের কারণেই এভাবে পুরো চিত্র পাল্টে গেছে। এটি যে অর্থনীতির জন্য মোটেও ইতিবাচক বার্তা বহন করে না, তা উপলব্ধি করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এর যেন কোনো সমাধান মিলছে না। উল্টো রিজার্ভ ক্রমশ কমায় ডলার সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে কোনো দৃশ্যমান সুখবর নেই। বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান এবং পণ্য রফতানিতে বৈচিত্র্যায়ণের বিষয়টিও সেভাবে লক্ষণীয় নয়। ফলে ডলার সংকটের সমাধান নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বারবার সতর্ক করছেন নির্দিষ্ট পরিমাণের নিচে রিজার্ভ কমে গেলে সামনে ভয়াবহ দিন আসছে। এজন্য আমদানি সংকোচন নীতির দিকে ধাবিত হয়েও সমাধান মিলছে না। কারণ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ঠিকই আমদানি করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলারের প্রবাহ পুনরুজ্জীবিত না করতে পারলে আগামীতে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হওয়া অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা, বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংকের নির্বাহীদের পেছনে ছুটছেন, তাহলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা কী পরিমাণ হিমশিম খাচ্ছেন তা সহজেই অনুমেয়। বিশেষ করে অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় যে লভ্যাংশ কমে যাচ্ছে, তা এড়ানোর পন্থা খোঁজা এখন বেশি জরুরি। কারণ বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সংকটগুলো আলোর মুখ দেখলেও ছোট ব্যবসায়ীদের সংকট আড়ালেই থেকে যায়।

ব্যবসা-বাণিজ্যের ঢেউ অব্যাহত রাখতে এলসি খোলা খুব স্বাভাবিক একটি কাজ। কিন্তু ডলার সংকটে ব্যাংকের এ নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে ডলারের প্রবাহ বাড়ানো যায়? সেই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে। এর সম্ভাব্যতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককেই ঠিক করতে হবে। এজন্য অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুনরায় আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

মোদ্দা কথা, এ সংকটের সময় শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে। এ সময়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি অর্থসংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। হুন্ডি-হাওলার দৌরাত্ম্য থামাতে ও খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরার ব্যবস্থা করা দরকার। দেশ থেকে অর্থ যেন আর পাচার না হতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তৎপরতা আরো বাড়ানো উচিত। সেই সঙ্গে অনলাইনভিত্তিক লেনদেনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা আরো জোরালোভাবে কাম্য।

বিদ্যমান এলসি খোলার সংকট না কাটলে রাজস্ব আদায়েও ঘাটতি তৈরি হবে। সার্বিকভাবে যে শোচনীয় অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা থেকে দূরে থাকতে বর্তমানে স্বচ্ছতার সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করতে হবে। দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন করে মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার পরামর্শও দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি যে বৈদেশিক ঋণগুলো রয়েছে, তা পরিশোধে আরো সময় নেয়ার পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। হুন্ডির সংকট এড়াতে প্রয়োজনে প্রণোদনা বাড়ানো এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। প্রবাসীসহ দেশে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। হুন্ডি যে অপরাধ, এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এছাড়া বিদেশে থাকা দূতাবাসগুলোর এক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। প্রবাসীদের কাছ থেকে হুন্ডিওয়ালারা যেভাবে সরাসরি অর্থ সংগ্রহ করে, সে প্রক্রিয়ায় আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে যেন রেমিট্যান্স আসে, সেদিকে এখন মনোযোগী হওয়া জরুরি। সবচেয়ে বড় কথা, দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার স্বার্থে রিজার্ভ সংকট দূর করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের যথাযথ দায়িত্ব পালন জরুরি।

Skip to content