
Photo by Pixabay
প্রশ্নঃ মনছবি হয় না কেন?
উত্তরঃ আসলে আমাদের মনছবি হয় না কেন? হোয়াই নট?
ধরুন একটা স্ক্রিনে লেখা আছে, এখানে ব্যাকগ্রাউন্ড কালার আছে।
এখন এখানে আপনি যদি কিছু লিখতে চান তখন আপনাকে কী করতে হবে? যদি স্পষ্ট করে লিখতে চান তার ব্যাকগ্রাউন্ড কালারটা সমস্ত মুছে ফেলতে হবে। তাহলে আপনি লিখতে পারবেন।
যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাকগ্রাউন্ডটা না মুছছেন অথবা যদি এখানেও লিখতে চান তাহলে পেছনের যে রং আছে সেই রঙের সাথে কন্ট্রাস্ট করে আপনাকে লিখতে হবে। তাহলে আরেকজন লেখাটা দেখবে।
সবচেয়ে ভালো হতো যদি এখানে আপনি সাদা রঙ ব্যবহার করতেন।
এই যে মন, এই মনেও যখন আপনি লিখবেন তখন কী করতে হবে?
মনটাকে তো আগে সাদা করতে হবে, পরিষ্কার করতে হবে। আমরা তো পাথরে লিখে খোদাই করে রাখি। মনে করি যে এটা থেকে যাবে। পাথর কতদিন থাকবে? পাথর কতদিন থাকে?
কোথায় লিখতে হবে?
ঐ যে গান আছে না, কাগজে লেখো নাম, এই নাম মুছে যাবে। পাথরে লেখো নাম, এইনাম ক্ষয়ে যাবে। হৃদয়ে লেখ নাম এই নাম রয়ে যাবে।
ধরুন কতজন কত কিছু নিজের জীবদ্দশায় বানিয়েছেন! বানিয়ে নিজের নাম লিখেছেন!
সক্রেটিস কি তার জীবদ্দশায় নিজের নাম লিখে যেতে পেরেছিলেন? সক্রেটিস কি মুছে গেছেন আমাদের জীবন থেকে?
কেন? তার কাগজের নাম পাথরের নাম মুছে ফেলা গেছে। কিন্তু তার হৃদয়ের নাম মোছা যায় নি।
তো এই হৃদয়ে কখন লিখতে পারবেন? যখন হৃদয়টা পরিষ্কার হবে। এই যে, ময়নামতি। ময়নামতি এখন থেকে একশ বছর আগে টিলা ছিল। কীভাবে টিলা হলো?
এখন থেকে দেড় হাজার বছর আগে এটা একটা বিহার ছিল। উঁচু উঁচু স্থাপনা ছিল। বিহারের যে স্টাইল সে স্টাইলে উঁচু স্থাপনা ছিল। যেটা চার তলা পাঁচ তলার সমান।
একটা সময় ছিল যে, এই বিহারে যারা থাকতেন তারা আর থাকল না, বিরান হয়ে গেল।
তো বিরান হওয়ার পরে কী হয়েছে?
ধরুন ঢাকা শহরের কথাই চিন্তা করেন। ঢাকা শহর আজকে যদি মানুষশূন্য হয়ে যায় এবং ধরুন একশ বছর এই ঢাকাতে কেউ আর আসবে না, তাহলে ঢাকা শহর কী হবে?
চারপাশ থেকে ধূলাবালি আসতে থাকবে। স্তর পড়তে থাকবে।
আরে একদিন ঝাড়ু না দিলে ঘরের অবস্থা কী হয়?
এরকম যদি একশ বছর ঝাড়ু দেয়া না হয় তো এটার অবস্থা কী হবে? এগুলো সব এই যে ২০ তলা ২২ তলা ২৪ তলা এগুলো সব টিলা হয়ে যাবে।
চারপাশে গাছ হয়ে যাবে।
আস্তে আস্তে আরো মাটি জমবে! আরো পানি জমবে বৃষ্টিতে টৃষ্টিতে। এটা জঙ্গলাকীর্ণ একটা পাহাড় হয়ে যাবে। অনেকগুলো পাহাড়।
আরো হাজার বছরে পরে যখন মানুষ আসবে আচ্ছা এই যে টিলা এখানে কিছু ছিল। কিছু কিছু ইনফরমেশন পাবে যে, এখানে বোধ হয় এই ছিল।
তারপরে খনন কাজ শুরু করবে। দেখা যাবে যে, ২২ তলা বিল্ডিং ২৩ তলা বিল্ডিং ৩০ তলা বিল্ডিং! আহারে বিল্ডিং আর বিল্ডিং আর বিল্ডিং!
অর্থাৎ যখন কোনোকিছু অব্যবহৃত থাকে সেখানে কী হয়? ধূলাবালির স্তর জমতে থাকে। একটা জিনিস যদি পরিষ্কার না হয়, পরিচ্ছন্ন না হয় নিয়মিত যদি পরিষ্কার করা না হয়, তাহলে সেখানে কি হয়? সেখানে ধূলা জমতে থাকে।
এবং ধুলা জমতে জমতে জমতে এটা একটা আবরণ হয়ে যায়। আস্তর হয়ে যায়। এবং ধুলা যদি বেশি জমে, শুধু কাপড় দিয়ে কিন্তু এটা মোছা যায় না।
প্রথমদিনের ধূলা কাপড় দিয়ে মুছতে পারবেন। কিন্তু একমাস পরের ধূলা কাপড় দিয়ে কিন্তু মুছতে পারবেন না।
আর যদি একবছর পরের ধুলা হয় ব্রাশ দিয়েও এটা খুব কঠিন। ডিটারজেন্ট পাউডার দিতে হবে। তারপরে ঘষতে হবে। তারপরও দেখা যায় যে, উঠছে না! বহু ঘষাঘষি করার পরে আহ এটা হবে।
মনের স্থিরতা ও পরিষ্কারের জন্যে প্রয়োজন- ‘শিথিলায়ন ও কোয়ান্টায়ন’
তো এই যে অন্তর ক্বালব। হৃদয়ে লেখ নাম!
আরে নামটা কখন লিখতে পারবেন আপনি? যখন হৃদয়টা পরিষ্কার হবে। তো কোয়ান্টায়ন হচ্ছে সেটা। যে আপনার মনটাকে স্থির করতে হবে।
ধরুন একটা সরোবর! একটা সরোবরে কখন আপনি আপনার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন? এক হচ্ছে, পানিটা যখন ট্রান্সপারেন্ট থাকবে, স্বচ্ছ থাকবে, পরিষ্কার থাকবে।
দুই হচ্ছে, যখন স্থির থাকবে। শিথিলায়ন দিয়ে আপনি মনটাকে স্থির করলেন। মনটাকে তো পরিষ্কার করতে হবে।
পরিষ্কার করার জন্যে হচ্ছে কোয়ান্টায়ন।
কেন? ধরুন একটা পুকুর। পুকুরের পানি ময়লা হয় কখন? ময়লা পড়তে পড়তে পড়তে যখন ভেতরটাও ময়লা হয়ে যায়, ময়লার স্তূপ যখন জমে যায়, তখন পুকুরের পানি ঘোলা হয়।
কারণ পুকুর কিন্তু প্রথম চেষ্টা করে যা ময়লা পড়ছে এটা নিচে জমাতে, নিচে জমিয়ে পানিটাকে পরিষ্কার রাখতে।
কিন্তু যখন আর নিচেও জমানোর কোনো জায়গা থাকে না, তখন এটা ঘোলা হতে থাকে।
তো আমাদের এই অন্তর, মনের যে আয়না। এই আয়নায় তখন আপনি রিফ্লেকশনটা দেখতে পাবেন মহাবিশ্বের সবকিছু, যত স্বচ্ছ হবে যত পরিষ্কার হবে।
মন যত স্বচ্ছ হবে তত আপনি সমস্ত রিফ্লেকশন চারপাশের সবকিছু আপনি নিজের ভেতরেই দেখতে পাবেন। যেভাবে মহামানবরা দেখেছেন, যেভাবে মুনি-ঋষিরা দেখেছেন, যেভাবে অলি-বুজুর্গরা দেখেছেন।
কিন্তু সেটার জন্যে প্রয়োজন হচ্ছে মনটাকে পরিষ্কার করা।
এবং মনের আবর্জনাগুলোকে পরিষ্কার করার জন্যে প্রয়োজন হচ্ছে কোয়ান্টায়ন। এই আবর্জনাগুলোকে যত পরিষ্কার করবেন তত মনটা স্বচ্ছ হবে।
মনের আবর্জনাগুলো কী? মনের বিষ মনের বাঘ যতরকম ভয় আছে দুঃখ আছে ঘৃণা আছে ঈর্ষা আছে হিংসা আছে রাগ আছে ক্ষোভ আছে- এগুলো হচ্ছে সব মনের আবর্জনা। এবং যতরকম খারাপ জিনিস আছে সেগুলো হচ্ছে সব মনের আবর্জনা।
এবং এটা পরিষ্কার যে শুধু রাগ ক্ষোভ ঘৃণা তা না। যতরকম অবিদ্যা যতরকম ভ্রান্তধারণা ভ্রান্তচিন্তা সেগুলোও হচ্ছে অবিদ্যা। এবং এটাকেও মন থেকে বের করে দিতে হবে।
কারণ একটা পাত্রে আপনি নতুন জিনিস দিয়ে ভরতে চাচ্ছেন।
ধরুন একটা পাত্রে আপনি মধু রাখতে চাচ্ছেন, কখন রাখতে পারবেন? যখন পাত্রটা খালি হবে।
পাত্র যদি ভরা থাকে ওখানে নতুন যা-কিছু দেবেন সেটা বেরিয়ে যাবে।
তো নিজের মন থেকে পূর্ববর্তী যত ভুলধারণা ভুলচিন্তা অবিদ্যা- এগুলোকে দূর করার জন্যে হচ্ছে কোয়ান্টায়ন।
যত কোয়ান্টায়ন করবেন, সামনে যখন তিনদিনের প্রোগ্রাম হয় কোয়ান্টায়নে যাবেন। বছরে দুবার তিন বার যাবেন। কারণ যত ধোলাই হবে ভেতরটা, তত আপনি আবার শুদ্ধ হয়ে ভালো হয়ে সুস্থ হয়ে আপনি আসতে পারবেন।
Thank you for your sharing. I am worried that I lack creative ideas. It is your article that makes me full of hope. Thank you. But, I have a question, can you help me?
Thanks for your comment.
Your article helped me a lot, is there any more related content? Thanks!
Your point of view caught my eye and was very interesting. Thanks. I have a question for you.