প্রশ্নঃ গুরুজী, মা-বাবার অমতে বিয়ে করেছি বলে অনুষ্ঠানের সব খরচ আমাকেই বহন করতে হয়েছে। একটা ব্যাংকে চাকরি করি বলে সহজেই ম্যারেজ লোন পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তখন ঝোঁকের মাথায় ছিলাম, তাই সব শর্ত খেয়াল করি নি। খুব জাঁকজমক করতে গিয়েছিলাম বলে লোনও নিয়েছিলাম প্রচুর। বিয়ের দ্বিতীয় বছরে এসেও পুরো টাকা শোধ করতে পারি নি। এখন প্রতি মাসেই বেতন থেকে বড় অঙ্কের টাকা কেটে রাখছে। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এখন আমি কী করব?
উত্তরঃ সবকিছু করে ফেলে দুই বছর পর আপনার মনে হচ্ছে, এখন আমি কী করব! পুরুষ মানুষ যদি এত বোকা হয়, তাহলে সংসার চালাবেন কীভাবে? আপনি যে বলছেন নিজের পছন্দে বিয়ে করেছেন, আসলে তো পছন্দটা ইম্পর্টেন্ট না, আপনি মা-বাবার সাথে জেদ করে বিয়ে করেছিলেন এবং আপনি যে অনেক ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন—এটা তাদের দেখাতে গিয়ে বিয়েতে বেহিসাব খরচ করেছেন!
আসলে মানুষ যখন চিন্তাভাবনা না করে ঝোঁকের মাথায় কাজ করে তখন এইভাবেই ভুল করে। বিয়েতে সামর্থ্যের চেয়ে বেশি খরচ করতে হবে কেন? এটা কী এমন ঘটনা? আপনার আগে কি দুনিয়ায় কেউ বিয়ে করে নি? আসলে পুঁজিবাদী চক্র নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই ভোজন, বিনোদন এবং জৈবিক চাহিদা পূরণকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে প্রচার করছে। নিত্যনতুন কৌশল বের করছে মানুষকে ব্যয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে। এক্ষেত্রে তাদের প্রধান অস্ত্র হলো মিডিয়া। যে রকম, সিনেমা-নাটকে বিয়েকে কাল্পনিক এক বিশাল ব্যাপার হিসেবে চিত্রিত করা হয়।
অথচ বিয়ে হলো একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা। এর মধ্যে আহামরি কিছু নেই। আর ‘ম্যারেজ লোন’ হলো সেইরকম একটা বুজরুকি। কিন্তু আমরা সেটা না বুঝে খরচের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠি। ঋণ করে হলেও এই ফুটানি করতে গিয়ে অনেক পরিবার দুর্দশায় পতিত হয়।
আপনার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। বিয়ের ব্যাপারে এর চেয়ে বড় ভুল, বড় অবিদ্যা আর কিছু হতে পারে না। কারণ আপনি ঋণ করে নিজের জাঁকজমক প্রদর্শন করে ঐ মেয়েটিকে মোহিত করতে চেয়েছেন। ওই যে আবু হোসেন ছিল না—একদিনের বাদশা—সেইরকম! আর ঐ মেয়েটি হয় একদিনের রানী। কিন্তু আপনি যে একদিনের বাদশা—এটা তো মেয়েটির মাথায় ঢোকে না। সে ভাবে সারাজীবন তার এরকমই যাবে। আর এই যে ছবি তার মাথায় ঢোকে—সমস্যা শুরু হয় এখান থেকেই।
এজন্যে আমরা সবসময় বলি, পুরুষরা যারা বিয়ে করবেন আগে স্ত্রীকে নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে খুব পরিষ্কার ধারণা দেবেন। বলবেন, এই হলো আমার অবস্থা। আমার সাথে থাকতে হলে এভাবেই থাকতে হবে। দেখবেন, কোনো অশান্তি হবে না।
আর ব্যাংক যে তার কর্মীদের এই ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলো দেয়, তার উদ্দেশ্য হলো কর্মীরা যাতে সহজে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে না যায়। আপনার মতোই এক তরুণ কাজ করতো একটি মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংকে। তার ব্যাংকে যেহেতু ম্যারেজ লোনের ব্যবস্থা আছে, স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্যে সেখান থেকে ঋণ নিয়ে নিজের বিয়েতে সে এত খরচ করল—যা এমনি অবস্থায় সে কখনোই করতে পারত না।
তখন সে ভেবেছিল, কী আর হবে? আমার ব্যাংকের টাকা দিয়েই তো বিয়ে করছি। কিন্তু টের পেলো তারপর। নিজের ব্যাংক হলে কী হবে। উচ্চহারে সুদ দেয়া থেকে নিস্তার পায় নি সে-ও। আর সে সুদের টাকা গুনতে গিয়ে রাজা-রানীর হালে বিয়ে করা তার সংসারে এখন আক্ষরিক অর্থেই নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। আপনার অবস্থাও অনেকটা তা-ই। যতদিন ঋণ পরিশোধ না হয় ততদিন কিছুই করার নেই। যেহেতু টাকা পাওনা আছে, এই চাকরি ছেড়ে আপনি যে ভালো কোথাও যাবেন—সেটাও সম্ভব না। আপনাকে এখানেই থাকতে হবে এবং ঋণ শোধ না করা পর্যন্ত চাকরি করে যেতে হবে। তারপর হয়তো অন্য কিছু ভাবতে পারেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?