প্রশ্নঃ আমার যদি কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় এবং আমরা যদি একে অপরকে সব সত্যি কথা বলি এবং সত্যি ভালবাসি একে অপরকে না দেখে, তবে সেই সম্পর্ক বা ফোনে গড়ে ওঠা সম্পর্কের স্থায়িত্ব কতটুকু?
উত্তরঃ দেখুন ফোনে গড়ে ওঠা সম্পর্কের স্থায়িত্ব কতটুকু? একটি মেয়ের চিঠি এরকম-‘আমি মেডিকেল শেষ বর্ষে পড়ছি। আমার স্বপ্ন ছিল মাদার তেরেসার মতো মহান কেউ হবো। কিন্তু এখন আমার সবকিছুই ওলটপালট হয়ে গেছে। ছয় মাস আগে একটি ছেলের সাথে আমার মোবাইলে কথা হয়। তারপর থেকে টানা গত ছয়টা মাস প্রতিরাতে দীর্ঘসময় নিয়ে তার সাথে কথা বলতাম। এভাবে কখন যে মনের অজান্তে তাকে ভালবেসে ফেলেছি, আমি বুঝতেও পারি নি। আমার প্রতি ওর ভালবাসাও ছিল আকাশচুম্বী, যেটা প্রকাশ পেত তার কথাবার্তায়। কথা বলে বলে দুজন দুজনার সম্পর্কে একশ ভাগই জেনে গিয়েছিলাম। সব জল্পনা-কল্পনা শেষে, দীর্ঘ ছয় মাস পরে আমাদের দেখা হলো। না দেখেই আমি ওকে আমার মনের মাঝে স্বামীর স্থান দিয়ে দিয়েছিলাম। তাই দেখা হওয়াটা আমার কাছে শুধু সৌজন্য ছাড়া আর কিছুই মনে হয় নি।
কাছ থেকে দেখে আরো বেশি ভালো লাগল। ওকে যখন মনের কথা খুলে বললাম, তখন ও জানাল যে, আমাকে ও বন্ধু ছাড়া আর কিছুই ভাবে না। আমি ওর একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই নাকি থাকব সারাজীবন। জীবনসঙ্গী হিসেবে কখনো মেনে নিতে পারবে না।
কারণ জানতে চাইলাম। এটা-সেটা অনেক অজুহাত দিল। কিন্তু আমার কাছে সেগুলোকে খুব একটা গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। অবশেষে একদিন জানতে পারলাম, আমার সবকিছুই তার পছন্দ হয়েছে কিন্তু একটা জিনিসকে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারে নি। তা হলো আমার বাহ্যিক সৌন্দর্য।
সে মনের সাথে অনেক বোঝাপড়া করেও আমাকে গ্রহণ করতে পারে নি। আমি তাকে অনেক বোঝালাম, বাহ্যিক সৌন্দর্যটাই কি সব? আমি তো তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসেছি। আমার মনটা তো অসুন্দর নয়। কত কাঁদলাম, কত বুক ভাসালাম।
ওর কাছ থেকে অবহেলার পর অবহেলা পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম সম্পর্ক ভেঙে দেবো। তা করলামও। কিন্তু আমি দুদিনেই পাগল হয়ে গেলাম। খাওয়াদাওয়া, লেখাপড়া সবকিছুই এলোমেলো হয়ে গেল। সারাদিন শুধু কান্নাকাটি আর বুকভরা যন্ত্রণা।’
কি রকম আহাম্মকি! মোবাইলে কথা বলতে বলতে একজনকে স্বামীর আসনে বসিয়ে দেয়া! দুদিন কথা বলেই বুঝে গেছে, ভালবাসা আকাশচুম্বী! অর্থাৎ কত অবাস্তব কল্পনা এবং আবেগ!
আসলে এই যে ফোনে ফোনে প্রেম, ইন্টারনেটে প্রেম, ফেসবুকে প্রেম, পরকীয়া-এসব ভার্চুয়াল সম্পর্কগুলোর কোনো স্থায়িত্ব নেই। এখানে সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নেই। এগুলো এক ধরনের ব্যাধি। এসব ব্যাধির যথাযথ চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। একজনের জ্বর হলে যেমন আমরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করি, তেমনি এই ফোনে ফোনে বায়বীয় প্রেম-ভালবাসা যারা করে, তাদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা হওয়া উচিত। কারণ এরাও এক ধরনের অসুস্থতায় ভুগছে। অতএব এসব থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারেন, তত ভালো।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?