প্রশ্নঃ আমি খুব একাকিত্বে ভুগছি। পরিবারের সবাই যার যার মতো ব্যস্ত। একই ছাদের নিচে থাকি, দেখা হয়, খাওয়া-দাওয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনের বাইরে কোনো কথা হয় না। শেষ কবে কারো সাথে মন খুলে কথা বলেছিলাম- মনে পড়ে না। বন্ধু-বান্ধবদের কাছে যে যাব, তাদেরও তো সময় নেই। মাঝে মাঝে অপরিচিত মানুষদের সাথে ফেসবুকে চ্যাট করি। নেটফ্লিক্সে সিরিজ দেখে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দেই শুধু মনটাকে ডাইভার্ট করার জন্যে। কিন্তু দিন শেষে কোনো লাভ হয় না। ভেতরের হাহাকার আরও বেড়ে যায়।
উত্তরঃ আসলে আপনি সম্ভবত খুব আরাম বলয়ের জীবন যাপন করেন। মানে জীবিকার জন্যে আপনাকে কোনো সংগ্রাম করতে হয় না। পরিবারেও হয়তো কোনো হার্ডশিপ নেই। এবং সম্ভবত আপনি খুব একটা ব্যস্ত নন। অর্থাৎ জীবনে সে অর্থে কোনো প্রতিকূলতা নেই আপনার। ফলে প্রচুর অলস ভাবনার সুযোগ পান। আর তার পরিণতিতে বিষণ্নতা, হতাশা, একাকিত্ব ইত্যাদি নিয়ে জটিলতাও আপনার বেশি! আসলে মানুষ যখন ব্যস্ত থাকে তখন বিসন্ণ ভাবনা থেকেও সে মুক্ত থাকে।
অবশ্য নির্ভর করছে আপনি কী নিয়ে ব্যস্ত। ব্যস্ততা যদি হয় এমন কিছু নিয়ে যা আপনাকে স্ট্রেসড করে, উদ্বিগ্নতায় ভোগায়, প্রতিযোগিতার মানসিকতায় ঠেলে দেয় তাহলে অবশ্য এই ব্যস্ততা আপনাকে প্রশান্ত করবে না।
এজন্যে সবচেয়ে ভালো ব্যস্ততা হতে পারে সেবাকাজে ব্যস্ততা। আসলে সেবা, অন্যের উপকার, আরেকজনকে ভালো অনুভূতি দেয়া- এটা যে একজন মানুষকে কতটা সুখী করে তার এক চমৎকার গল্প আছে-
একবার একজন মহিলার স্বামী মারা গেলেন। তাদের একটি ছেলে ছিল। সেই ছেলেকে আঁকড়ে ধরেই তিনি বাঁচতে চাইলেন। ছেলেকে বড় করলেন, পড়াশোনা করালেন, সে ছেলে চাকরিতে জয়েনও করল। এরপর একদিন হঠাৎ অফিস থেকে ফেরার সময় সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেল।
ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে ভদ্রমহিলা জ্ঞান হারালেন। জ্ঞান ফেরে সাত দিন পর। তিনি ভাবতে লাগলেন যে এভাবে বেঁচে থেকে কি লাভ। এই পৃথিবীতে তার আর কেউ নেই। নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণায় তিনি শুয়ে শুয়ে দিন পার করতে লাগলেন।
একদিন হঠাৎ পথের ধারে খুব করুণ কণ্ঠে মিউ মিউ ডাক শুনে থামলেন। একটু খোঁজ করতেই দেখেন এক আবর্জনার স্তূপের মধ্যে একটি বেড়াল ছানা ভাঙ্গা কৌটায় পা কেটে ফেলেছে। সেখান থেকে দরদর করে রক্ত পড়ছে।
তার খুব মায়া হলো। তিনি সাথে সাথে বেড়াল ছানাটিকে বাসায় নিয়ে এলেন। তাকে সেবা শুশ্রূষা করলেন। ১৫ দিনের মাথায় বিড়ালছানাটা সুস্থ হয়ে গেল। সুস্থ হওয়ার পর সে শুধু পায়ে পায়ে ঘোরে আর এটা ওটা নিয়ে খেলা করে। এমনি করতে করতে একদিন সে মহিলার কান টুপিতে মাথা দিয়ে দিল আর তিনি তা দেখে হোহো করে হেসে উঠলেন।
হঠাৎ তার খেয়াল হলো যে তার ছেলে মারা যাবার ছ’মাস পর তিনি এই প্রথম হেসেছেন। তখন তিনি ভাবলেন যে – একটা সামান্য বেড়াল ছানাকে সাহায্য করে যদি আমি এত সুখী হতে পারি তাহলে মানুষকে সেবা করে কতটা সুখী হবো?
আসলে আপনি যত সেবা করবেন, যত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন এবং সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত থাকবেন, তত আপনার একাকিত্ববোধ, অনিশ্চয়তা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা পালিয়ে যাবে।
কোয়ান্টাম বিশাল এক পরিবার। এই পরিবারের সদস্য হয়ে আপনি কেন একা থাকবেন? যখনই সময় পান, নিকটতম শাখা সেলে চলে আসুন এবং সৃষ্টির সেবায় কাজ করুন।
আর আরেকটি ব্যাপার হলো- একাকিত্ব এবং একাকিত্ববোধ এক নয়। আপনার একাকিত্ব থাকতে পারে, কিন্তু একাকিত্ববোধ আপনি নাও করতে পারেন। এটা তখন হবে যখন আপনি মূলের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন। এজন্যে স্রষ্টাকে বেশি বেশি স্মরণ করুন। যখন অন্তরে স্রষ্টাকে অনুভব করবেন, আপনি একাকিত্ব বোধ করবেন না।
আর এসব ভার্চুয়াল জগৎ আপনাকে সাময়িকভাবে ভুলিয়ে রাখতে পারে কেবল। যে কারণে আপনি নিজেও বুঝতে পারছেন যে আপনার ভেতর অস্থিরতা কিন্তু কমে নি। বরং আরো বেড়েই চলছে। তাই সময় থাকতে সতর্ক হোন। অপরিচিত এবং অপ্রয়োজনীয় ভার্চুয়াল যোগাযোগ থেকে আপনি যত দূরে থাকবেন, তত নিরাপদ এবং প্রশান্তিতে থাকবেন।
আর পরিবারের সাথে চেষ্টা করুন কোয়ালিটি টাইম কাটাতে। অর্থাৎ যতটুকু সময়ই কাটান সেটা যেন কোয়ালিটি টাইম হয়। মনোযোগ দিন। মমতা দিন। দেখবেন আপনার মনোযোগ, মমতা ধীরে ধীরে তাকেও প্রভাবিত করছে। সে-ও আপনার প্রতি একই মনোযোগ ও মমতা দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছে।
আর আপনি যেহেতু মেডিটেশন জানেন, মেডিটেশনকেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন পরিজনদের প্রিয়জনদের কাছে টানার চেষ্টার জন্যে ব্যবহার করতে। এজন্যে আমাদের কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েটরা মেডিটেশনের কমান্ড সেন্টার ব্যবহার করে থাকেন। এ সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে দেখুন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?