প্রশ্নঃ মনছবি দেখি এবং বিশ্বাসও করি যে, আমি পারব। কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ করা হয় না। ঘুরে বেড়াই ভার্চুয়াল জগতে। এ থেকে বের হতে পারছি না। আমার প্র্যাকটিক্যাল একশন কী হবে?
উত্তরঃ প্র্যাকটিক্যাল একশন করতে হলে আগে ভার্চুয়াল ইলুশন থেকে বেরুতে হবে। কারণ ভার্চুয়াল ইলুশনের জগতে যতক্ষণ আপনি থাকবেন, ততক্ষণ আপনার পক্ষে প্রাকটিক্যাল কোনো একশনে যাওয়া সম্ভব নয়। এজন্যেই বিশ্বাস করলে বা মনছবি দেখলেও বাস্তব কাজে আপনার পক্ষে উদ্যোমী হওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আর এই যে বলছেন, বের হতে পারছেন না। এর কারণ ভার্চুয়াল এই জগতটাকে তৈরিই করা হয়েছে নেশাগ্রস্ত করার উপকরণে ভরপুর করে। আপনি যাতে এই জগতের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকেন সেজন্যেই রাতদিন কাজ করছে সিলিকন ভ্যালির নামজাদা সব এটেনশন ইঞ্জিনিয়ার। অ্যাপ ও সাইটগুলোতে প্রয়োগ করছে জুয়া আসরের ফন্দি আর গেমিফিকেশনের কৌশল। তুখোড় প্রোগ্রামাররা লিখছে ব্রেন হ্যাকিংয়ের কোড।
এর ওপর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিল গার্ডিয়ান। একের পর এক উদাহরণ দিয়ে তারা বুঝিয়েছে, ভার্চুয়াল জগতের উপকরণগুলো যে কত সুপরিকল্পিতভাবে নেশা ধরিয়ে দেয়ার মতো করে তৈরি করা হয়েছে! যেমন তারা বলছে, টুইটারের নোটিফিকেশনের কথা! লগ ইন করার সাথে সাথেই নোটিফিকেশনটা আসে না। কারণ এটাই জুয়ার টেকনিক! জুয়া মেশিনের হাতল ঘোরানোর সাথে সাথেই যেমন আমরা ফলাফল জানতে পারি না, একটু অপেক্ষা করতে হয়, এই নোটিফিকেশনও তাই।
আবার স্ন্যাপচ্যাটের স্ট্রিকস ফিচার। বিশেষ কারো সাথে আপনি কতবার মেসেজ আদান প্রদান করেন, তার হিসাব রাখে এই ফিচারটি। একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন, এই হিসাবটা আপনাকে আসক্ত করবার জন্যে। কারণ সংখ্যাটা দেখলেই মনে হবে, কীভাবে এটা বাড়ানো যায়! বাস্তবে হয়েছেও তাই। অল্প বয়সী যেসব ছেলেমেয়ে স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করছিল, স্ট্রিকস হারানোর ভয়ে তারা এত আতংকিত ছিল যে, মা-বাবার সাথে বেড়াতে যাওয়ার সময় নিজেদের পাসওয়ার্ড দিয়ে যাচ্ছিল তারা সমবয়সী আরো পাঁচজন বন্ধুকে, যাতে তার হয়ে তার স্ট্রিকস কাউন্ট বাড়াতে পারে বন্ধুরা!
আর এসব কারণেই আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে স্মার্টফোনের স্ক্রিন স্ক্রল করি। ফোনের দিকে তাকিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হই। ফোন বাসায় রেখে কখনো যদি বাইরে বেরোই, তো অর্ধেক পথ চলে গিয়েও হয়তো ফিরে আসি শুধু ফোনটা নেয়ার জন্যে!
সবচেয়ে পরিহাস হচ্ছে, টেক মাফিয়া বা যারা এগুলো তৈরি করেছে, তারা কিন্তু খুব ভালোভাবেই জানে এসব কথা। যে কারণে এসবের ক্ষতি থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টার অন্ত নেই তাদের। যেমন, জাস্টিন রোজেনস্টাইন। ফেসবুকের ‘লাইক’ ফিচার নিয়ে কাজ করেছে যে টিম, তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। কাজেই ‘লাইক’ এর সর্বনাশা প্রভাব সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি আর কেউ জানতো না, তা বলাই বাহুল্য! তো রোজেনস্টাইন নিজের ল্যাপটপের অপারেটিং সিস্টেমটাকে এমনভাবে সেট করে রেখেছেন যাতে রেডিট নামে একটি সোশাল মিডিয়া সাইটে তা ঢুকতেই না পারে। স্ন্যাপচ্যাটকে তিনি নাম দিয়েছেন ‘হেরোইন’ বলে। আর নতুন আইফোন কিনে তার সহকারীকে নাকি বলেছেন, এখানে ‘প্যারেন্টাল কন্ট্রোল’ সেট করে দিতে। যাতে চাইলেও নতুন কোনো অ্যাপ তিনি ডাউনলোড করতে না পারেন।
একই কাজ করেছেন ফেসবুকের সাবেক প্রডাক্ট ম্যানেজার লিয়া পার্লম্যানও। ‘লাইক টিম’ এর তিনিও একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সালে তার ব্লগ থেকেই ‘লাইক’ ফিচারের ঘোষণাটি এসেছিল। ফেসবুকে কাজ করতে করতে পার্লম্যান এতটাই হাঁপিয়ে উঠেছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত পেশাই পরিবর্তন করে ফেলেছেন! পার্লম্যান এখন আর কম্পিউটার প্রোগ্রামার নন। তিনি এখন একজন ইলাস্ট্রেটর! ছবি আঁকেন। বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা লাভ করেছেন। ছবির মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন ধর্মের নৈতিক আর মানবিক বাণীগুলো। ফেসবুকের নিউজ ফিড বন্ধ রাখার জন্যে পার্লম্যানের ফোনে আছে বিশেষ একটি ওয়েব ব্রাউজার প্লাগ ইন। আর ফেসবুকে তার নিজের পেজটা দেখভাল করার জন্যে পয়সা দিয়ে ভাড়া করেছেন একজন সোশাল মিডিয়া ম্যানেজারকে! কারণ? যাতে নিজে ব্যবহার করতে গিয়ে এতে আসক্ত হয়ে না যান!
তাহলেই বুঝুন, আপনার কী করা উচিত। ভার্চুয়াল জগতের এ নেশা থেকে বের হতে হবে। তা না হলে যত মনছবিই দেখেন বা যত বিশ্বাসই করেন, আপনার পক্ষে কাজে নেমে পড়া কখনো সম্ভব হবে না।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?