প্রশ্নঃ গুরুজী, আপনি বলেছেন সবসময় মানবতার কল্যাণে কাজ করতে। আমি মানুষকে বিশ্বাস করি, উপকার করি। কিন্তু মানুষের দ্বারা অনেক প্রতারিত হয়েছি। প্রতারিত হওয়ার কষ্ট ভুলব কী করে?
উত্তরঃ মানুষের উপকার করা আর প্রতারিত হওয়া এক নয়। মানবতার কল্যাণে আপনি অবশ্যই কাজ করবেন। কিন্তু প্রতারিত হওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ প্রতারিত হয় তার ভুলের কারণে, বোকামির কারণে। বোকার মতো সাহায্য করতে গিয়ে মানুষ কীভাবে ভোগান্তির শিকার হয়, তার আরেকটি করুণ ঘটনা শুনুন ভুক্তভোগী মানুষটির নিজের জবানিতে—
‘আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু একদিন বললেন, তার স্ত্রীর একটা চাকরি দরকার। আমি কোনো সাহায্য করতে পারব কি না। আমি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটা উপজেলার টিএনও-এর টাইপিস্ট হিসেবে কর্মরত। আমার মতো একজন ছা-পোষা সরকারি চাকরিজীবীর পক্ষে এ সাহায্য করার কোনো সুযোগ ছিল না। তাই এড়িয়ে গেলাম।
কিন্তু এর মধ্যে আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় একদিন আমার বাসায় এসে কথায় কথায় বললেন, তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দিতে পারেন। কারো চাকরির প্রয়োজন হলে যেন তাকে বলি। আমার তখন মনে পড়ল বন্ধুর স্ত্রীর কথা। বন্ধুর সাথে তার আলাপ করিয়ে দিলাম। বন্ধুকে সে বলল, কিছু টাকার বিনিময়ে একটা চাকরির ব্যবস্থা সে করে দিতে পারবে। বন্ধু রাজি হলো। কিন্তু কয়েকদিন পর আমার আত্মীয়টি বন্ধুর কাছে এক লক্ষ টাকা দাবি করল। বলল, চাকরিটা কনফার্ম করার জন্যে টাকাটা লাগবে। আমার বন্ধু আমাকে জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম, ‘তুমি ভেবে দেখ, ঝুঁকি নেবে কি না। তবে আমার আত্মীয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারো। চাকরি না হলে উনি টাকাটা অবশ্যই ফেরত দিয়ে দেবেন।’
আমি আসলে আমার আত্মীয়ের চটকদার কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। লেনদেন হয়ে গেল। আত্মীয়ের কথামতো ঢাকায় এসে আমার বন্ধু টাকাটা তার হাতে তুলে দিলো। কিন্তু চাকরি তো আর হয় না। আজ দেই, কাল দেই করে টাকা ফেরত দেয়ারও আর কোনো আলামত নেই। এদিকে টাকার টেনশনে আমার বন্ধু একদিন অজ্ঞান হয়ে পড়ল। বাসার লোকজন দৌড়ে এসে বলল, জ্ঞান ফিরে সে যদি টাকাটা দেখতে পায় বা টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা পায়, তাহলে সুস্থ হবে, নইলে হার্ট-এটাক হতে পারে। আমি পড়লাম মহাসংকটে। একদিকে বন্ধুর জীবনসংশয়—আমার সূত্রে পরিচিত হয়ে আমারই আত্মীয়ের প্রতারণার শিকার হয়ে আজ তার এ অবস্থা! অন্যদিকে আমি একজন ছা-পোষা কেরানী। মাসিক পে-স্কেলের ৯,১৬০ টাকা দিয়ে বাসাভাড়া, সংসার খরচ ইত্যাদি সামলাতে গিয়েই নুন আনতে পান্তা ফুরায়। সেখানে এতগুলো টাকা এখন আমি কীভাবে ম্যানেজ করব!
ছুটে গেলাম আমার অফিস যে ব্যাংকের সাথে লেনদেন করে সেখানে। ম্যানেজার স্যারকে বিপদের কথা খুলে বললাম। ফার্নিচার লোন হিসেবে তিনি এক লক্ষ টাকা দিতে রাজি হলেন। কিন্তু মাসে কিস্তি দিতে হবে ৩,৪২০ টাকা। মাসে যার বেতনই নয় হাজার টাকা, সে কীভাবে সাড়ে তিন হাজার টাকার কিস্তি টানবে—এসব যুক্তি-বুদ্ধির কথা ভাববার সময় তখন ছিল না। টাকাটা নিয়ে বন্ধুর হাতে দিলাম। সে সুস্থ হলো। কিন্তু আমি আজো বয়ে চলেছি এই ঋণের বোঝা। এর মধ্যে সাতটি কিস্তি খেলাপ হয়েছে। ব্যাংক নোটিশ দিয়েছে—আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। আমি চেষ্টা করলে চাকরি থেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে ঋণটা শোধ করতে পারি। কিন্তু একটি ক্ষত থেকে আরেকটি নতুন ক্ষত হোক, তা আমি চাই না।
আসলে এই হচ্ছে বোকার মতো সাহায্য করতে যাওয়ার পরিণতি। আপনাকে তো যাচাই-বাছাই না করে অন্যকে বিশ্বাস করতে বলা হয় নি। আপনি বিশ্বাস করবেন স্রষ্টাকে। বিশ্বাস করবেন নিজেকে। মস্তিষ্ককে কাজে লাগাবেন। আপনি যখন মস্তিষ্ককে কাজে লাগাবেন, নিয়মিত মেডিটেশন করবেন, আপনার প্রজ্ঞা কাজ করবে। প্রতারিত হওয়া থেকে সবসময় আপনি বেঁচে যাবেন। তখন আর বোকামি হবে না, লোভ কমে যাবে।
আর লোভ কমে গেলেই মানুষ সবসময় প্রতারণা থেকে রক্ষা পায়—অন্যের কল্যাণ করে তার কাছ থেকে প্রতিদান প্রত্যাশা করে না। কারণ প্রতিদান প্রত্যাশা করছেন বলেই নিজেকে প্রতারিত মনে করছেন। আমরা কোয়ান্টাম মেথড কোর্সেই বলি, যার উপকার করবেন সে আপনার ক্ষতি করতে পারে, আপনার বদনাম করতে পারে। কিন্তু আপনি যদি নেক নিয়তে উপকার করে থাকেন, সে উপকার প্রকৃতিতে জমা থাকবে। যখন প্রয়োজন হবে, এমন মানুষের সাহায্য পাবেন—যাকে জীবনে দেখেন নি, চেনেন না। অতএব বুদ্ধি প্রয়োগ করে সামর্থ্যের মধ্যে অন্যের উপকার করবেন।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?