প্রশ্নঃ মিথ্যা বলে সাহায্য চেয়ে যারা মানুষের আবেগের অপব্যবহার করে – তারা কি প্রতারক নয়?
উত্তরঃ প্রতারক তো বটেই। একজনের ঘটনা এরকম-
‘তখন আমি এইচএসসির ছাত্র। একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ দেখলাম, একটি লোক খুব ক্লান্ত হয়ে হাঁটছে। আমাকে জিজ্ঞেস করলো কয়টা বাজে এবং গাবতলী কতদূর? উত্তর দিতে গিয়ে জানলাম, সে এখন গাবতলীতে হেঁটে যাবে। সেখানে পরনের কাপড় বিক্রি করে কিছু খাবে। আর তারপর পরিচিত কোনো গাড়ি ধরে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবে।
আমার কৌতূহল বাড়লো। তার সাথে আরো কথা বলে জানলাম, সে আর তার বাবা গ্রামে কৃষিকাজ করে জীবনধারণ করতো। নিজেদের জমিও আছে। কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় তার বাবা গাছ থেকে পড়ে আহত হন। ডাক্তার বলেছে তিন হাজার টাকা হলে অপারেশন করা যাবে। ভালো হয়ে যাবে তার বাবা। সে ঢাকায় এসেছিলো সেই টাকার ব্যবস্থা করতে। ভেবেছিলো, রিকশা চালিয়ে টাকা যোগাড় করবে। কিন্তু আসার পথে তার সবকিছু চুরি হয়ে যায়, আর এ কদিন ঘুরেও সে কোনো কাজ যোগাড় করতে পারে নি। অনাহারে, কপর্দকশূন্য হয়ে কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করে সে এখন ফিরে যাচ্ছে গ্রামে।
তার দেশের বাড়ি আমার নানুর বাড়ির কাছে। ভাষা শুনেও তা-ই মনে হলো। তার হতবাক চেহারাটা দেখে খুবই মায়া হলো। মনে হলো, সত্যি কথাই বলছে। জিজ্ঞেস করলাম, বাবার চিকিৎসার কী হবে? বললো, জমিটা বিক্রি করে দেবে। তার আরো দুটি অবিবাহিত বোন আছে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়েও সে চিন্তিত।
ভাবতে লাগলাম, মানুষ কত অল্প টাকার জন্যে অসহায় হয়ে পড়ে! তাকে বাসা পর্যন্ত এনে দরজার সামনে দাঁড়াতে বললাম। ভেতর থেকে ১,৫০০ টাকা নিয়ে এসে তার হাতে দিলাম। বললাম, বাকিটা নিজেকে যোগাড় করতে। তার হতবিহবল চেহারা দেখে আবারো মনে হলো, সত্যিই সে বিপন্ন। যাক, একটা ভালো কাজ করতে পেরেছি ভেবে খুব তৃপ্তি পেলাম।
অনেকদিন পর আমার এক কাজিনের কাছ থেকে হুবহু একই ঘটনা শুনে বুঝলাম-একই লোক, সবকিছু একই। অর্থাৎ এটা ছিলো একটা প্রতারণা।’
কাজেই বোকা হবেন না। কাউকে সহযোগিতা করতে গিয়ে একজন পেশাদার প্রতারকের শিকার হচ্ছেন কি না এটা আপনাকে বুঝতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড