প্রশ্নঃ নিজ খরচে বিয়ে করা কি আবশ্যক? আপনি বলেছেন, বিয়েতে অযৌক্তিক খরচ করা অবিদ্যা। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে কীভাবে সম্পন্ন করা উচিত? কতটুকু বা কী পরিমাণ খরচ করা যেতে পারে?
উত্তরঃ একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন পুরুষের অবশ্যই নিজ খরচে বিয়ে করা উচিত! আর নিজের বিয়ের খরচ যোগানোর সামর্থ্য যদি না থাকে তাহলে তাকে ধৈর্য ধরতে হবে। হযরত ফাতিমা (রা)-এর সাথে হযরত আলী (রা)-এর যখন বিয়ে ঠিক হলো, তখন তিনি খুবই দরিদ্র ছিলেন। অগত্যা বিয়ের খরচ যোগানোর জন্যে যে বর্মটি তিনি যুদ্ধে ব্যবহার করতেন তা বিক্রি করে দেন। তাদের বিয়ের মোহরানা ছিল ৪০০ রৌপ্যমুদ্রা। আলী তা আদায় করেন। তারপরই তার বিয়ে হয় হযরত ফাতিমা (রা)-এর সাথে। ইসলাম এভাবেই বিয়ে সম্পন্ন করার কথা বলে।
যদিও এখন বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করতে গিয়ে খরচের ক্ষেত্রে এক অশ্লীল প্রতিযোগিতা চলে। সম্প্রতি ভারতের এক বিয়েতে ৫০০ কোটি রুপি খরচ হয়েছে। যে দেশে ৩০ কোটি মানুষ দরিদ্র, সে দেশে এক বিয়েতেই খরচ হয়েছে ৫০০ কোটি রুপি!
অনেক বছর আগের ঘটনা। এক ভদ্রলোক তার মেয়েকে বিয়ে দেবেন। তিনি যাকে পাচ্ছেন তাকেই দাওয়াত দিচ্ছেন। ধানমণ্ডির আবাহনী মাঠজুড়ে প্যান্ডেল করা হলো। পুরো মাঠের প্রত্যেকটি টেবিলে অর্কিড দেয়া হয়েছিল। সে-সময় আমাদের দেশে অর্কিড খুব কম পাওয়া যেত। থাইল্যান্ড থেকে অর্কিড আনানো হয়েছিল টেবিল সাজানোর জন্যে। কী পরিমাণ অপচয়!
বিয়ের ক্ষেত্রে এ খরচ করাকে আমরা সামাজিক মর্যাদা মনে করি। সামর্থ্য না থাকলে ঋণ করে হলেও খরচ করি। ফলে এমনও হয়েছে যে, পরিবার দেউলিয়া হয়ে গেছে শুধু বিয়েতে খরচের ফুটানি করতে গিয়ে। আসলে সংসার জীবনে পরবর্তীতে যে সমস্যাগুলো হয়, তার অনেকটারই সূত্রপাত বিয়েতে এই অতিরিক্ত খরচের মধ্য দিয়ে।
যেমন, একটি মধ্যবিত্ত পরিবার-সীমিত উপার্জন, সীমিত সঞ্চয়। কিন্তু এই পরিবারেরই একটি ছেলে যখন বিয়ে করছে, তখন ফুটানি দেখানোর জন্যে হোক, স্ত্রীর কাছে নিজেকে হিরো হিসেবে উপস্থাপনের জন্যে হোক বা কনের পরিবারের কাছে নিজেদেরকে জৌলুসওয়ালা পরিবার হিসেবে দেখানোর জন্যে হোক, এত বেশি খরচ করে ফেলে যে, বিয়ের খরচের ৯৮% ই করতে হয় ঋণ করে।
এদিকে এত শাড়ি-গয়না, আয়োজনের বিলাসিতা দেখে আপনার স্ত্রী তো ভাবছে, আরে বাপরে বাপ! আমার স্বামীর কত উপার্জন! আমার শ্বশুরবাড়ি কত না পয়সাওয়ালা! কিন্তু একমাস পর যখন বিয়ের দিনের সাথে তার সংসারের কোনো মিল থাকে না-সাধারণ খাওয়াদাওয়া ও কেনাকাটায় টানাপোড়েন, সমস্যাটা শুরু হয় তখন থেকে।
অতএব স্ত্রীকে প্রথমদিনই বলবেন, দেখ, এই হচ্ছে আমার সামর্থ্য। যদি অ্যারেঞ্জড ম্যারেজও হয়, স্ত্রীর সাথে আগে দেখা করে বলবেন যে, দেখুন, আমার এই অবস্থা। আমাকে যদি বিয়ে করেন, আপনাকে এভাবে চলতে হবে। যদি মেয়ে বুদ্ধিমতি হয়, আপনাকে বিয়ে করবে। আর যদি আহাম্মক হয়, তাহলে আপনাকে প্রত্যাখ্যান করবে। আর আহাম্মক কাউকে বিয়ে করাটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ না।
তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড
Related Posts
Q&A Series – Episode 292: Failure is the pillar of success!
Q&A Series – Episode 291: What exactly is visualization?
Q&A Series – Episode 290: How does visualization work?