প্রশ্নঃ আমি জিজিএন জাতীয় একটি প্রতিষ্ঠানের মেম্বার হওয়ার জন্যে বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছি, বিনিময়ে তারা অনেক সুবিধা দেবে এই শর্তে। পরবর্তীতে গিয়ে দেখি অফিস উধাও। আসিম কাজমী নামে এক পাকিস্তানি এই প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর। তার সাথে আমার যে চুক্তিপত্রটি হয়েছে, তা-ও আছে আমার কাছে। এসব নিয়ে আমার বাবা ও পরিবারের সদস্যরা আমার ওপর ক্ষুব্ধ। আপনার দোয়া ও উপদেশ কামনা করছি।
উত্তরঃ আপনি চুক্তি করে টাকাপয়সা দিয়ে এখন আমার উপদেশ কামনা করছেন। এখন আমি আপনাকে কী উপদেশ দেবো? আর দিয়ে লাভটাই বা কী হবে? সবসময় টাকাপয়সা দেয়ার আগে ভাববেন, পরামর্শ করবেন। পরে নয়। ছাতা হাতছাড়া করে কখনো ‘আমি কার খালু’ হতে যাবেন না।
গল্পটা এরকম- গ্রামের ভায়রাবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে হাটের ভিড়ে দাঁড়িয়ে পরিচিত কাউকে খুঁজছিলেন এক ভদ্রলোক। হঠাৎ উদয় হলো সুন্দর চেহারার এক যুবক। লম্বা সালাম দিয়ে এমন আপন ভঙ্গিতে সে কথা বলতে লাগলো, যেন অনেক দিনের চেনা। ভদ্রলোক কিছুটা বিব্রত হয়েই জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কে বাপু? তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না। সে বললো, চিনলেন না খালু? আমি তো আপনার ভাগ্নে। আপনি আমার খালু হন। ভদ্রলোক ভাবলেন, ভায়রার গ্রাম যেহেতু, হবে বোধহয় ভাগ্নে-টাগ্নে। এর মধ্যে ছেলেটি বললো, আমি থাকতে আপনি কেন কষ্ট করে ছাতা ধরছেন খালু? আমাকে দিন, আমি ধরছি। ভদ্রলোক ভাবলেন, আহা! ছেলেটা বড় ভালো! মুরুব্বিদের খেদমত করতে জানে! সরল মনে ছাতাটা দিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ পেছনে তাকিয়ে দেখেন, ছেলেটি নেই। অনেকক্ষণ দাঁড়ালেন। তা-ও দেখা নেই। এখন খুঁজবেন যে, সে উপায়ও তো নেই। নামধাম কিছু জিজ্ঞেস করেন নি। শেষমেশ হাটের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চেঁচাতে লাগলেন, আমি কার খালু রে! আমি কার খালু রে! কিন্তু ভাগ্নে পরিচয়ের সেই প্রতারক তো ততক্ষণে পগার পার!
অর্থাৎ কোনো বিনিয়োগ করবার আগে খুব ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে, যাচাই করে তারপর টাকা দেবেন। কারণ টাকা দেয়ার সময় আপনার কোনো সমস্যা হবে না। সমস্যা হবে টাকাটা তোলার সময়। আসলে এমএলএমের এই প্রতারণাগুলোর বৈশিষ্ট্যই হলো-এরা কিছুদিন এক নামে ব্যবসা করে। টাকাপয়সা হাতিয়ে নেয়ার পর জনগণ এবং আইন শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষ যখন সরব হয়, তখন কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়ে আবার এরা নতুন নামে নতুন কৌশল নিয়ে আবির্ভূত হয়।
যেমন, ২০০১-০২-এ জিজিএন এলো। প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর তাদের ব্যবসা বন্ধ হলো। কিন্তু অন্য নামে এলো নতুন নতুন এমএলএম। তেমনি একটি এমএলএম হলো ‘ইউনিপেটুইউ’-২০০৯ সালের অক্টোবরে যারা ব্যবসা শুরু করে ১০ মাসে বিনিয়োগকারীদের দ্বিগুণ লাভ দেয়া হবে-এমন লোভ দেখিয়ে। আর বলে, এটা তারা করবে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের ব্যবসা করে। ২০১১ সালের প্রথম নাগাদ যখন বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে সচেতন হয়, ততদিনে তারা ছয় লাখ মানুষের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
পণ্য নেই, কোনো বিনিয়োগ নেই, তারপরও ব্যবসার নাম করে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে এত টাকা সংগ্রহ করতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর হলো-আপনার মতো সরল কিছু মানুষের ‘আমি কার খালু হয়ে যাওয়ার’ নির্বুদ্ধিতা। অতএব পরামর্শ সবসময় আগে চাইবেন। খোঁজখবর আগে নেবেন। পরে নয়।