Business Care News

Business News That Matters

ai generated, fierce, anger

প্রশ্নোত্তর সিরিজ – পর্ব ১১৭: ‘রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম’

প্রশ্নঃ ‘রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম’ জেনেও রাগ দমন করতে পারি না। রাগের কারণ যখন ঘটে, তখন সবকিছু ভুলে যাই। ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে এমন কথা বলি বা আচরণ করি যা পরে অনুশোচনার কারণ হয়। কী করা যায়?


উত্তরঃ এটি একটি বাস্তব সমস্যা। কারণ হঠাৎ করে এই ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা নিজের এবং প্রিয়জনদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। যেমন, হয়তো মা-বাবা সন্তানকে অভিশাপ দিয়ে দেন। ভাঙচুর করেন। রাগের মাথায় এমন কথা বলে ফেলেন যে, ২০ বছরের সম্পর্ক একটা কথায় নষ্ট  হয়ে যায়। এমনকি রাগের কারণে প্রেশার হাই হয়ে গুরুতর অসুস্থ বা মৃত্যু হতে পারে।

অতএব মুহূর্তের এই রাগকে দমন করতে হবে। এজন্যে যখনই রেগে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে, এক মুহূর্ত থেমে লম্বা একটা দম নিয়ে কোয়ান্টা ভঙ্গি করবেন। মনকে জিজ্ঞেস করবেন যে, মন, এই মুহূর্তে আমার জন্যে সর্বোত্তম করণীয় কী? কারণ যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন, কোয়ান্টা ভঙ্গির সাথে আলফা লেভেল বা প্রশান্ত অবস্থা অনুভব করাটা তাদের কন্ডিশনিং হয়ে যায়। ফলে দেখবেন চমৎকারভাবে আপনি ঐ পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করতে পারছেন।

আর যে আপনাকে রাগাতে চেয়েছিল সে বিস্মিত হয়ে যাবে যে, এটা কী হলো! আমি তো চাচ্ছিলাম তার সাথে ঝগড়া করতে, এখন দেখি উল্টো তার কথাই আমাকে শুনতে হচ্ছে। কারণ যখন আপনি রেগে কথা বলেন, তখন সে কথার কোনো প্রভাব শ্রোতার ওপরে পড়ে না। তার ওপরে তখনই প্রভাব পড়বে যখন আপনি ঠান্ডাভাবে বলবেন, মমতার সাথে বলবেন, তার সেন্টিমেন্টকে আঘাত না করে বলবেন।

আসলে রেগে যাওয়াটা পৌরুষ না, শক্তিমত্তা না। এটা হলো আহাম্মকি। যে কারণে জার্মান দার্শনিক নীটশে বলেছিলেন, সত্যিকারের যোদ্ধা সে-ই যে জানে কখন অস্ত্র সংবরণ করতে হয়। অর্থাৎ অস্ত্র থাকলেই অস্ত্র ব্যবহার করা যায়। কিন্তু অস্ত্র ব্যবহার করাটা সত্যিকারের যোদ্ধার পরিচয় নয়। অস্ত্র কখন সামলে রাখতে হবে সেটা যে জানে, সে-ই হচ্ছে সত্যিকারের যোদ্ধা। অতএব আপনার শক্তি রয়েছে। সেই শক্তিকে সংহত করা, নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাই হচ্ছে আপনার মহত্ত্ব।

আসলে রাগলে যে মানুষ সবসময় হেরে যায় তার অসংখ্য উদাহরণ ইতিহাসে এবং আমাদের চারপাশে আছে। এমনকি এখনকার বিশ্ব পরিস্থিতিও সে কথাই মনে করিয়ে দেয়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের দুঃখজনক ঘটনার পর বিশ্বে যে উত্তেজনা এবং সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে তার মূলেও এই রাগ-ক্রোধ এবং এর পাল্টাপাল্টি আক্রমণ।

ক্রোধের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে একটি সহজ টেকনিক অবলম্বন করতে পারেন। তা হলো-যখনই রেগে যাবেন, ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে তার প্রকাশ ঘটাতে যাবেন, এমন একটা ব্যবস্থা করুন যাতে ঐ রাগের দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করা যায়। আজকাল মোবাইলে ক্যামেরা বা ভিডিও করার ব্যবস্থা থাকায় এটা সহজ একটা সুযোগ। পরে যখন শান্ত হবেন, তখন ঐ ছবি বা দৃশ্যগুলো দেখুন। দেখবেন আপনার ধীর-স্থির শান্ত চেহারার চেয়ে ঐ চেহারা কত আলাদা। ক্রোধে উন্মত্ত একটা দানবের মতো এমন হিংস্র এবং কুৎসিত চেহারা দেখে আপনি নিজেই ভীষণ লজ্জা পাবেন। তখন নিজেই দেখবেন যে, প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছেন, ভবিষ্যতে আর কখনো রেগে গিয়ে ঐ চেহারার পুনরাবৃত্তি করব না। প্রয়োজনে বার বার ঐ রাগান্বিত কুৎসিত চেহারা দেখুন। রাগ-ক্রোধমুক্ত হওয়ার এটা একটা কার্যকর পদ্ধতি।

তথ্যসূত্রঃ প্রশ্নোত্তর | কোয়ান্টাম মেথড

Skip to content